ঘর থেকে বাহির হওয়া ও প্রবেশ করা

নানা প্রয়োজনে আমরা ঘর থেকে বাহিরে যাই। আবার ফিরে আসি। এটা আমাদের নিত্য-নিয়মিত অভ্যাস। এর মাধ্যমেই আমাদের বাহিরের জগতের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়।এভাবেই আমরা পারিবারিক বা অভ্যন্তরীণ জগতে প্রবেশ করি। এ ক্ষেত্রেও নবীজির বিশেষ কিছু শিক্ষা ও নির্দেশনা আছে।

 

১)

সময়-সুযোগ হলে ঘর থেকে বাহির হবার আগে দু’ রাকাত নামাজ পড়ে নেওয়া উচিত। কেননা নবীজি বলেছেন, তুমি ঘর থেকে বের হবার সময় দু’ রাকাত নামাজ পড়ে বের হবে। ( মাজমাউয যাওয়ায়ীদ ৮৫৬৭ ) নামাজ হচ্ছে বান্দা ও আল্লাহর মাঝে মেরাজের মতো। নবীজি যে কোন বিপদ-আপদ-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আগে নামাজ পড়তেন। ঘরের বাহিরে যাওয়াও তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ঘর থেকে বের হবার আগে সময় সুযোগ হলে দু’ রাকাত নামাজ পড়ে নেওয়া উচিত।

 

২)

ঘর থেকে বের হবার সময় সালামের মাধ্যমে বিদায় জানানোও নবীজির সুন্নত। কেননা নবীজি বলেছেন, তোমরা যখন ঘর থেকে বের হবে, তখন ঘরের লোকদেরকে সালাম জানিয়ে বিদায় নেবে। ( শুয়াবুল ঈমান ৮৩৫৯ ) সালাম ইসলামের নিদর্শন। ইসলামে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নবীজি এর জন্য সালাম বিনিময় করতে বলেছেন। সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা দৃঢ় হয়, বিদ্বেষ দূর হয় এবং পরিচয় গভীরতা লাভ করে। মুসলমানরা সালামের মাধ্যমে ঐক্য অর্জন করে, সামাজিকতা বৃদ্ধি করে ও পরস্পরে সহযোগী-সমবায়ী হয়, এ কারণে নবীজি সালামকে ঈমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সালামকে বলেছেন বরকতের মাধ্যম।

 

৩)

ঘর থেকে বের হবার সময় আসমানের দিকে তাকিয়ে নিন্মোক্ত দোয়া পড়াও নবীজির সুন্নত ছিল। উম্মে সালামাহ ( রাঃ ) বলেন, নবীজি যখনই ঘর থেকে বের হতেন, তখনই আসমানের দিকে তাকিয়ে এই দোয়া পড়তেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা আন আদিল্লা আও উদাল্লা আও আযিল্লা আও উযাল্লা আও আজলিমা আও উজলামা আও আজহালা আও ইউজহালা আলাইয়া ( হে আল্লাহ, তুমি আশ্রয় দান করো, আমি যাতে গুমরাহ না হই, আবার অন্য কেউ যাতে আমাকে গুমরাহ না করতে পারে। আমার যাতে পদস্খলন না হয়,আবার অন্য কেউ যাতে আমার পদস্খলন করতে না পারে। আমি যাতে জুলুম না করি, আবার অন্য কেউ যাতে আমার ওপর জুলুম না করতে না পারে। আমি যাতে অজ্ঞ না হই, আবার অন্য কেউ যাতে আমাকেও অজ্ঞ না বানাতে পারে। ) ( আবু দাউদ ৫০৯৩)

 

 

৪)

নিজের পরিচয় জানিয়ে ও সালাম দিয়ে কারো গৃহে প্রবেশ করা উচিত। নিজের ঘরে ঢুকার সময় কি করবে? ইমাম আহমদ রহঃ বলেন, নিজের ঘরে ঢুকার আগে গলা খাকারি দিয়ে নিবে বা জুতার শব্দ করবে, যাতে গৃহবাসী বুঝতে পারে, তাদেরকে অপ্রস্তুত অবস্থায় গৃহে প্রবেশ না করতে হয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা কারো বাড়িতে গেলে, আগে অনুমতি নাও ও সালাম দাও, এর আগে প্রবেশ করোনা। ইসলাম শালীনতা ও সামাজিকতার ধর্ম। কারো অনুমতি না নিয়ে হঠাৎ কারো প্রবেশ করলে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তার ব্যক্তিগত জীবনে বিঘ্নতা ঘটতে পারে। তার ব্যস্ত সময় নষ্ট হতে পারে। আর সালামের প্রয়োজনীয়তার কথা তো আগেই বলা হয়েছে।

 

৫)

ঘরে ঢুকার সময় দোয়া করে ঢুকা। কেননা নবীজি বলেছেন, ঘরে ঢুকার সময় তোমরা এই দোয়া পড়ো, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলিজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওলাজনা ও বিসমিল্লাহি খারাজনা ওয়া আল্লাহি তাওয়াক্কালনা। ( হে আল্লাহ, তোমার কাছে ভালোভাবে প্রবেশ ও বাহির হবার তওফীক প্রার্থনা করি। তোমার নামেই প্রবেশ করি ও বাহির হই এবং তোমার ওপরেই ভরসা রাখি। ( আবু দাউদ ৫০৯৬) এই দোয়ায় আল্লাহর কাছে কল্যাণের তওফিকের কথা আছে, আল্লাহর প্রতি আস্থা, ভরসা ও আত্মসমর্পণ আছে। যেসব দোয়া নবীজি থেকে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ব্যাপক অর্থ ও বরকত আছে। এই দোয়াটিও এর ব্যতিক্রম নয়।

 

৬) ঘরে প্রবেশ করার পর মিসওয়াক করা ও দুই রাকাত নামাজ পড়া, এটাও নবীজির সুন্নত। কেননা আয়েশা  (রাদিঃ) বলেন, নবীজি ঘরে ঢুকলে প্রথমেই মিসওয়াক করে নিতেন। ( মুসলিম ২৫৩) । একইভাবে নবীজি বলেন, ঘরে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নাও। এটা তোমাকে অপছন্দনীয় প্রবেশ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। মিসওয়াক করার মাধ্যমে নানামাত্রিক উপকার পাওয়া যায়। ক্লান্তি ও বিরক্তি দূর হয়। মুখের গন্ধও দূর হয়। সজীবতা ফিরে আসে। মানুষ উজ্জেবিত হয়ে উঠে। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলে সামনে আরেকটা জগত সামনে আসে। নানা সমস্যা-গল্প-সম্ভাবনা নিয়ে। নামাজ পড়ার মাধ্যমে এই জগতের মুখামুখি হলে আল্লাহ এতে বরকত দিবেন। সমস্যা ও সঙ্কট সহজ করে দিবেন।