মানুষের রুচি ও পরিচয়ের প্রকাশ ঘটে পোশাকে। তাইতো অপরিচিত কাউকে দেখলে প্রথমেই আমাদের চোখ যায় পোশাকে। আমরা পোশাকের মাধ্যমেই তাকে বুঝতে ও ধরতে চেষ্টা করি। পোশাক মানুষের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পোশাক বিষয়ে নবীজির কিছু শিক্ষা ও আদর্শ আছে।
১) পোশাক আল্লাহর নেয়ামত
পোশাককে আল্লাহর নেয়ামত মনে করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহ তাআলার দান। এর মাধ্যমে আমরা নানারকমের উপকার পেয়ে থাকি। [1.( আ’রাফ ২৬)] । আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করলে আল্লাহ নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। এভাবে আমাদের বন্দেগীর হক আদায় হয়। বস্তুত এই মূলনীতিই পোশাক বিষয়ে নবীজির শিক্ষা ও আদর্শের মূল ভিত্তি।
২) পরিষ্কার ও সাদা কাপড়
পরিষ্কার ও সাদা কাপড় পরতে নবীজি আগ্রহ যোগিয়েছেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা তোমাদের কাপড় পরিষ্কার করো, পরিচ্ছন্ন রাখো। [2.( মুদ্দাচ্ছির ৪)] । নবীজি বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কেননা সাদাই দেখতে সবচে পরিচ্ছন্ন ও উত্তম কাপড়। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কাপড়ের মাধ্যমেই যেহেতু মানুষের প্রাথমিক পরিচয়, রুচি ও বোধ জানা যায়, তাই অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে। এর মধ্যে সাদা কাপড় পরা ভালো। কেননা সাদা কাপড়কেই সবচে সুন্দর ও পরিষ্কার দেখা যায়।
৩) অমুসলিম ও অহংকারীদের কাপড় বর্জন
অমুসলিম ও অহংকারীদের মতো কাপড় পরা যাবেনা। কেননা নবীজি বলেছেন, যারা আমাদের ছেড়ে অপরের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।[3. ( তিরমিজি ২৬৯৫ )] একইভাবে নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধির পোশাক পরিধান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে এমনি এক কাপড় পরিধান করাবেন এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিবেন।[4. ( আবু দাউদ ৪০২৯)] । কাপড় যেহেতু মানুষের পরিচয়,রুচি ও বোধকে বহন করে, তাই মুসলমানরা কীভাবে অমুসলমানদের কাপড় পরতে পারে? এতে করে মুসলমানদের মধ্যে অমুসলমানদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি বিস্তারের আশংকা তৈরি হয়। যা নানাভাবে ফুসুকি ও কুফুরি সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে অহংকার ও প্রসিদ্ধির জন্য কাপড় পরলে অহংকারের গুনাহ তো আছেই, সাথে সাথে এতে গুনাহগারদের সাথে সাদৃশ্যও তৈরি হয়। প্রয়োজনহীন কাপড় পরিধান করায় তার মধ্যে অর্থহীনতা তৈরি হয়। যা আরও গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি করে।
৪) পুরুষ ও নারী আলাদা স্বতন্ত্র পোশাক
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়ে স্বতন্ত্রতা আছে। তাই নারীরা পুরুষদের পোশাক এবং পুরুষরা নারীদের পোশাক পরতে পারবেনা। কেননা নবীজি এর ওপর লা’নত করেছেন। [5.( আবু দাউদ ৪০৯৮ )] । একইভাবে পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা হারাম। স্বর্ণ ব্যবহার করাও হারাম। কেননা এগুলো নারীদের বৈশিষ্ট্য। নবীজি থেকে এই বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। [6.( মুসনাদে আহমদ ২২২৪৮)]। আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারীকে আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আলাদা সামাজিকতা ও মাকাসেদ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তারা একে অপরের পোশাক পরিধান করলে এটা লঙ্ঘিত হওয়ার আশংকা আছে। এবং এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবার আশংকা আছে।
৫) ডান দিকে থেকে কাপড় পরা
নবীজি ডান দিক থেকে কাপড় পরতে বলেছেন। [7.( তিরমিজি ১৭৬৬)] নতুন পরিধানের সময় আল্লাহর প্রশংসা করতে বলেছেন এবং কল্যাণের দোয়া করতে বলেছেন। [8.( আবু দাউদ ৪০২০)] এছাড়াও সবসময় কাপড় পরার সময় আল্লাহর প্রশংসা করতে বলেছেন। [9.( আবু দাউদ ৪০২৩)] । শুরুতেই যেমন বলেছি, পোশাক আল্লাহর একটা গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত, তাই প্রতিবার কাপড় পরার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করে নেওয়া উচিত। বিশেষত নতুন কাপড় পরার সময় এর মাধ্যমে মঙ্গল কাজ আঞ্জাম দেওয়ার দোয়া করতেও বলা হয়েছে। বান্দার তো কোন শক্তি নাই। তাইতো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করাই তার শক্তি। আর ডান দিকে হচ্ছে, বরকত। ফলে অন্য সকল কাজের মতো কাপড়ও ডান দিকে শুরু করা উচিত।
৬) লুঙ্গির সামনের দিক একটু নীচু থাকবে
নবীজি লুঙ্গী পেছনের থেকে সামনের দিকে একটু বেশী নীচে রাখতেন।[10. ( আবু দাউদ ৪০৯৫)] কাপড় খুলার সময় বাম দিক থেকে খুলতে হবে। কাপড় খুলার সময়, বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, এই দোয়া পড়বে। [11.( আমালুল ইয়াওমি অয়াল লাইল ২৭৩ )] । কাউকে পরিচ্ছন্ন কাপড় পরতে দেখলে এই দোয়া পড়বে, ইলবাস জাদীদান ওয়া ঈশ হামিদান ওয়া মুত শাহীদান, যার অর্থ হচ্ছে, নতুন কাপড় পরিধান করো, উত্তম জীবন যাপন করো এবং শহীদী মৃত্যুবরণ করো।