মদিনায় হিজরত করার পর এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম কাজ হলো মসজিদে নববির নির্মাণ। আর এজন্য সে স্থানটি নির্ধারিত হলো,মদিনায়প্রবেশের যেখানে সর্বপ্রথম তাঁর উটটি বসেছিলো। এ স্থানটির মালিক ছিলো দুই এতিম বালক। বালকদ্বয় নবীজিকে মসজিদ নির্মাণের জন্য সে জমি দিয়ে দিতে চাইলেও তিনি জমিটি ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করলেন এবং স্বশরীরে মসজিদের নির্মাণ-কাজে অংশগ্রহণ করলেন।
নবীজি ইট-পাথর বইছিলেন আর নানা উদ্দীপনার কথা বলছিলেন। সাহাবিরা তাঁর কথায় যারপরনাই প্রাণিত হচ্ছিলেন। তাঁরাও নানা কবিতা ও উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলে নিজেদের উদ্দীপ্ত করে রাখছিলেন। একসময় নবীজি বললেন,‘হে আল্লাহ, জীবন তো পরকালের জীবনটাই। তুমি আনসার আর মুহাজিরদের ক্ষমা করো।’
এ জমিতে মুশরিকদের কিছু সংখ্যক কবর ছিলো। কিছু অংশ পতিত ছিলো। তাছাড়া খেজুর ও গারকাদের কয়েকটি গাছ ছিলো। নবীজি মুশরিকদের কবরগুলো পরিষ্কার করিয়ে নিলেন, অসমতল জায়গাটা সমতল করলেন এবং খেজুর ও অন্য গাছগুলো কাটিয়ে কেবলার দিকে খাড়া করে দিলেন; সে সময় কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।
দরজার দুই বাহুর স্তম্ভগুলো পাথরএবংদেওয়াল নির্মিত হলো কাঁচা ইট দিয়ে।ছাদের উপর খেজুরের ডাল পালা চাপিয়ে আবরণ তৈরি করা হলো আর খেজুর গাছের গুঁড়ি দিয়ে থাম তৈরি করা হলো।মেঝেতে বিছানো হলো বালি ও ছোট ছোট কাঁকর।মসজিদ-ঘরে তিনটি দরজা লাগানো হয়েছিলো। কেবলার দেয়াল হতে পেছনের দেয়ালের ব্যবধান ছিলো একশো হাত; পাশাপাশিও প্রায় এই পরিমাণ বা এর কিছু কম প্রস্থ ছিলো।
নবীজি মসজিদের পাশে কয়েকটি ঘর তৈরি করিয়ে নিলেন;এগুলোর দেয়াল ছিলো কাঁচা ইটের আর ছাদ ছিলো খেজুরের গুঁড়ির বর্গার; ছাউনি দেয়া হয়েছিলো খেজুরের শাখা ও পাতা দিয়ে। এগুলো ছিল উম্মাহাতুল মুমিনিন নবীপত্নীগণেরআবাসকক্ষ।একক্ষগুলোরকাজসম্পূর্ণহওয়ারপরনবীজি হযরত আবু আইয়ুব আনসারির বাসা থেকে এখানে এসে ওঠেন।
মসজিদে নব্বি শুধুমাত্র সালাত আদায়ের একটি ঘরমাত্র ছিলো না, বরং তা ছিলো তৎকালীন মুসলিম-রাষ্ট্রের বিভিন্নমুখি কর্মকাণ্ডের উৎসস্থল। এ মসজিদইমুসলিম-সমাজের আদিশিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে বসে মুসলিমগণ ইসলামের যাবতীয় শিক্ষা-দীক্ষা এবং হেদায়েতের পাঠ গ্রহণ করতেন;এ মসজিদ সেই মিলনায়তন, যেখানে জাহেলিয়াত-জীবনের দীর্ঘ কালের বিবাদ-বিসম্বাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের অবসান ঘটিয়ে আরব-গোত্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলা হয়েছিলো;এ মসজিদেই বসতো মদিনা নামক প্রথম মুসলিম-রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনার পরামর্শসভা। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ, সৈন্য পরিচালনা, সন্ধি স্থাপন, চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি যাবতীয় কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই মসজিদে নববি। অধিকন্তু, এ মসজিদটি ছিলো অনেক গৃহত্যাগী ও গৃহহারা মহান সাহাবার আবাস, যাঁদের থেকে অনেক দূরে পড়ে ছিলো ধন-সম্পদ আর আত্মীয়-স্বজনেরমায়াময় পরম্পরা…
তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি।