সবচেয়ে খোদাভীরু মানুষ

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন, অথচ তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিলো। তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, এ মর্মে কিছু সাহাবীর মনে কৌতূহল ছিলো যে, তিনি তাহলে কতটুকু ইবাদত করেন! এই কৌতূহল নিয়ে তিনজনের একটি দল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কাছে গিয়ে নবীজির ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। নবী-পত্নীগণ যখন রাসূলের ইবাদত সম্পর্কে তাদের জানালেন, তখন তাদের কাছে ইবাদতের পরিমাণ খুব কম মনে হলো। তারা বললো, আমাদের থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত ঊর্ধ্বে, আল্লাহ তাঁর আগে-পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেন তারা ধরে নিলো, যেহেতু আল্লাহর রাসূলকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁকে বেশি ইবাদত করতে হবে না; কিন্তু তাদের জন্য যেহেতু আগাম ক্ষমার অঙ্গীকার নেই, তাই তাদের বেশি ইবাদত করতে হবে। যখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জানতে পারলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এমন এমন বলেছো? তাহলে শুনে রাখো, আমি তোমাদের থেকে আল্লাহকে বেশি ভয় করি। কিন্তু আমি রোযা রাখি, ইফতারও করি। নামায পড়ি, ঘুমাইও। বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হই। এসব আমার সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার উম্মত নয়।

এখানে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেছেন। যার মধ্যে আলোচ্য শিরোনামের সাথে আরও দুইটি বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে। তা হলো, আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন, এর অর্থ এই নয় যে, তাঁর দায়িত্ব কমে গেছে; বরং তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। দুনিয়ার নিয়মগুলোর দিকে তাকালেই এর মর্ম আমরা বুঝতে পারবো। দ্বিতীয় ব্যাপারটি হলো, খোদাভীতির কারণে স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ নয়। পরিষ্কারভাবে তিনি বলেছেন, কেউ তাঁর থেকে বেশি আল্লাহকে ভয় করে না, তিনিই আল্লাহর সবচেয়ে খোদাভীরু বান্দা।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এমন কিছু দেখি, যা তোমরা দেখো না এবং এমন কিছু শুনি, যা তোমরা শোনো না। আকাশ বিকট আওয়াজ করে আর করাটা তার জন্য সমীচীন। আকাশে চার আঙুল জায়গা এমন নেই, যেখানে কোনো ফেরেশতা সেজতারত নেই। আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে আর অধিক পরিমাণে ক্রন্দন করতে। এমনকি স্ত্রী-সম্ভোগে আরাম পেতে না এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ে পাহাড়ে বেরিয়ে পড়তে।

তিনি আরও বলেছেন, তাদের কী হলো, আমি যা করি, তারা তা থেকে বিরত থাকে; অথচ আমি আল্লাহকে তাদের চেয়ে বেশি চিনি এবং বেশি ভয় করি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে সবসময় আল্লাহভীতি বিরাজ করতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন ঘটনায় তাঁকে উদ্বিগ্ন দেখা যেতো। এসব পরিস্থিতি সামনে এলে তিনি দ্রুত আল্লাহর জিকির ও ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন। আনাস রা. বলেন, যখন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস হতো, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখের উদ্বেগের ছাপ ফুটে উঠতো।

আয়েশা রা. বলেন, আকাশ যখন মেঘে ছেয়ে যেতো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্থির হয়ে পড়তেন। একবার সামনে অগ্রসর হতেন, আবার পেছনে পড়ে যেতেন। কখনো ঘরে আসতেন, আবার বের হয়ে যেতেন। তাঁর মুখের রঙ বদলে যেতো। অবশেষে বৃষ্টি নামলে তাঁর দুশ্চিন্তা কেটে যেতো। আয়েশা রা. বলেন, আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি জানি না, তেমন হয় কি না, যেমন এক জাতি দেখেছিলো—‘এরপর যখন তারা সেই আজাবকে মেঘরূপে দেখতে পেলো, যা তাদের উপত্যকাগুলোর দিকে এগিয়ে আসছিলো।

আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলকে কখনো উচ্চস্বরে হাসতে দেখিনি। যখনই খুশি হতেন, মুচকি হাসতেন। একবার সূর্যগ্রহণ হলো। রাসূল উদ্বিগ্ন হয়ে ঘর থেকে নারীদের চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এতটাই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন তিনি।

আবদুল্লাহ ইবনে সাখীর রা. নামে এক সাহাবী বলেন, একবার আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। দেখি, তিনি নামায পড়ছেন। আর তাঁর ভেতর থেকে কান্নার কারণে ফুটন্ত ডেকচির মতো আওয়াজ বেরোচ্ছে।

ঘটনা ও সূত্র : কুরআন—সূরা আহকাফ;বুখারী, তিরমিযী, ইবনে মাজা, মুসলিম।