ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আহকাম ও আদর্শ মানার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারো আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে ত্রুটি থাকলে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই তার ত্রুটি থেকে যায়। তাই কীভাবে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করতে হবে, এর জন্য ইসলামে কিছু বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা আছে।
১) আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ তা’আলার
একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, আল্লাহকেই বিশেষ সম্মান করতে হবে এবং আল্লাহকেই ভয় পেতে হবে।[1. ( বাইয়িনাত ৫। ফাতাহ ৯। যুমার ১৬)] কেননা ইবাদত, বিশেষ সম্মান ও ভয়ের মাধ্যমেই কারো প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য প্রদর্শন করা যায়। ইসলামে মৌলিকভাবে একমাত্র আল্লাহই আনুগত্যের যোগ্য। [2.( যুমার ৩)] এটাই তাওহীদের ধারণা। ফলে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ইবাদত, বিশেষ সম্মান ও ভয় করার উপযুক্ত।
২) আল্লাহর প্রতিই শুধু ভরসা
আল্লাহ তাআলার সামনে মুখাপেক্ষী থাকতে হবে ও একমাত্র আল্লাহ তাআলার ওপরেই ভরসা রাখতে হবে।[3. ( ফাতির ১৫। মায়েদাহ ২৩)] । আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে, আমিও তার সাথে সেরকম ব্যবহার করি। [4.( বুখারি ৭৪০৫)] । বস্তুত বান্দা হবার অর্থই মুখাপেক্ষী থাকা। মুখাপেক্ষী থাকলে ভরসা করতে হবে। ভরসা কার করবেন? একমাত্র আল্লাহ তাআলার ওপরেই ভরসা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম ফায়সালাই করবেন, এই ধারণাও রাখতে হবে। কেননা আল্লাহ আআলা প্রজ্ঞাবান। তিনি তো যথেচ্ছভাবে কোন ফায়সালা গ্রহণ করবেন না। তিনি কল্যাণের ফায়সালাই গ্রহণ করবেন।
৩) আল্লাহ-সচেতন থাকা
আল্লাহর প্রতি লজ্জা রাখতে হবে। কেননা নবীজি বলেছেন, আল্লাহ তাআলাকেই বেশী লজ্জা করতে হবে অপরাপর মানুষদের থেকে। [5.( ইবনে মাজাহ ১৯২০)]। যথাসম্ভব সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে, তার জিকির করতে হবে। [6.( আহযাব ৪১, ৪২)]। বস্তুত আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণে থাকলে পাপ ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। স্মরণ মনে মনে হতে পারে, আবার সরাসরি মুখেমুখে জপার মাধ্যমেও হতে পারে। এবং অবশ্যই পাপ ও মন্দ কাজ করলে আল্লাহ কী বলবেন, এই ভয় ও লজ্জা মনে থাকতে হবে। তাতেই অনেক পাপ ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
৪) আল্লাহর সাথে মুলাকাতের তামান্না
আল্লাহ তাআলার সাথে মুলাকাতের তামান্না রাখতে হবে। কেননা নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মুলাকাতের আকাংখা রাখে, আল্লাহ তাআলাও তার মুলাকাতের আকাংখা রাখেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মুলাকাতকে অপছন্দ করে, আল্লাহ তাআলাও তার মুলাকাতকে অপছন্দ করেন। [7.( তিরমিজি ২৩০৯ )] । আল্লাহ তাআলা পরকালে বান্দাদের মুলাকাত দিবেন। সেটা কেমন ও কীভাবে, সেটা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তবে বান্দা যে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসে, তার ইবাদত ও আনুগত্য করে, তাই, তার মনে আল্লাহর মুলাকাতের বিশেষ আগ্রহ ও তামান্না জন্ম নেয়। এই তামান্নাই বন্দেগীর সম্পর্কের খোলাসা।
৫) আল্লাহ ও তার রসূলই শুধুমাত্র ভালোবাসার যোগ্য
সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ও আল্লাহর ও তার রসূলের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা নবীজি বলেছেন, যার মধ্যে তিনটি বিষয় থাকবে, সেই একমাত্র ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতিই সবচে বেশী ভালোবাসা থাকা।[8. ( বুখারি ১৬)] । এর প্রেক্ষিতেই সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আহকামকেই মূল বিচারক বানাতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমাকে ভালবাসলে আমার আনুগত্য করো। বস্তুত আনুগত্যই ভালোবাসার প্রকৃত মাপকাঠি।
৬) দ্বীন কঠিন বা অসম্ভব নয়
দ্বীনকে সহজ-সরল মনে করতে হবে। দ্বীনকে অতিরিক্ত কঠিন বা বোঝা মনে করা যাবেনা। কেননা নবীজি বলেছেন, নিশ্চয় ইসলাম সহজ-সরল ধর্ম। বস্তুত ইসলাম সিরাতে মুসতাকীম ও মধ্যপন্থার প্রতি আহ্বান করে। মধ্যপন্থা প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। কেননা আল্লাহ তো প্রজ্ঞাময়। তিনি তো অর্থহীন, যথেচ্ছ ও অতি কঠিন হুকুম দিতে পারেন না। এটা তো তার শানের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তিনি বান্দার জন্য উপযুক্ত বিধান ও ধর্মই অবতীর্ণ করেছেন। সুবহানাহু ওয়া তাআলা ওহুয়াল আলীউল আজীম।