নবীজির দৈহিক গঠন বর্ণনায় শামায়েলে তিরমিজির জুড়ি নেই বললেই চলে। তার অধিকাংশ বর্ণনাই বুখারি ও মুসলিমের সমার্থক। আমরা চেষ্টা করব শুধু সহিহ হাদিসের মতে তার বিবরণ উল্লেখ করতে।
বারা ইবনে আযেব রা.-এর ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি বর্ণনা একত্র করলে দাঁড়ায় : রসুল স. ছিলেন মাঝারি গড়নের—অতি লম্বাও না, খাটোও না। তবে আনাস রা.-এর বর্ণনা থেকে বোঝা যায় নবীজি মাঝারি গড়নের চেয়ে একটু দীর্ঘ ছিলেন। তাঁর উভয় বাহুমূলের মধ্যবর্তীস্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল।
তার মাথার কেশরাশি ছিল উভয় কানের লতি পর্যš— প্রলম্বিত। কখনও তাঁর চুল কাঁধ ছুঁয়ে যেত। কুঞ্চিত চুল ছিল না তার, আবার চুলগুলো একেবারে সোজাও ছিল না।7 বাবরি চুল বিশিষ্ট ও পরনের লাল পোশাকে তিনি অতুলনীয় সুন্দর হয়ে উঠতেন। কিন্তু উজ্জ্বল কটকটে লাল পোশাক তিনি পছন্দ করতেন না। কিছুটা ডোরাকাট লাল পোশাক ছিল তার পছন্দ।
তিনি ছিলেন সবচে’ সুন্দর চেহারা ও গঠনের অধিকারী। বারা’কে রা.- জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রাসুল স.-এর চেহারা কি তরবারির মতো ছিলো? তিনি জবাব দেন : না; বরং চাঁদের মতো। তাঁর মাথা ছিল একটু বড়। তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, আবার সম্পূর্ণ তামাটে বর্ণেরও না। বরণে তিনি ছিলেন ফর্সা লাবণ্যময় আকর্ষণীয় ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ চেহার অধিকারী। আবু হোরায় রা. বলেন : তিনি ছিলেন রূপার মতো শুভ্র। আর আনাস রা. বলেন : তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের।
জাবের ইবনে সামুরার রা. ভাষায় সেই চেহারায় মুখবিবর ছিল কিছুটা প্রশস্ত, চোখ ছিল টানা। চোখের শুভ্রতার মধ্যে কিছুটা লালিমা ছিল। চোখে সুরমা দিতে ভালোবাসতেন। প্রায় প্রতি রাতেই সুরমা দিতেন।
মাথার অগ্রভাগের কিছু চুল ও কিছু দাড়ি ধুসর বর্ণের হয়ে গিয়েছিলো। তেল ব্যবহার করলে তা প্রকাশ পেতো না। চুলগুলো এলোমেলো থাকলে বোঝা যেত। তিনি ছিলেন ঘন দাঁড়িবিশি। আনাস রা. বলেন : ওফাতকালে তার মাথা ও দাড়ির বিশটি চুলও সাদা হয় নি। তেল ব্যবহার করার পর তা-ও বোঝা যেত না। এমনতিও সাদা চুলক’টি সাদা নয় ঠিক, লাল লাল হয়েছিল মাত্র। নবীজি তার চুল বেশ পরিপাটি করে রাখতেন। কখনও সখনও মধ্যিখানে সিঁথি কাটতেন।
নবীজির স. হাত ও পায়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন : তার হাত-পা ও আঙ্গুলগুলো ছিল মাংসল। হাতের তালু ছিলো প্রশস্ত। তাঁর হাতের তালুর মতো কোমল রেশমও আমি স্পর্শ করি নি। তাঁর পায়ের গোড়ালি ছিল সরু ও হালকা গোশতবিশিষ্ট। জাবের ইবনে সামুরা’র রা. শৈশবে নবীজি স. তাঁর গালে হাত বুলিয়েছিলেন, সে-কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন : আমি তার হাতে এমন শীতলতা ও সুগন্ধি অনুভব করেছি, যেনো তিনি তা সুগন্ধির কস্তুরি থেকে বের করেছেন।
আসলে নবীজির সমগ্র শরীরের ঘ্রাণই ছিল সুন্দর সুগন্ধির মতোই। আনাস রা. বলেন : তার শরীরের ঘ্রাণের চেয়ে উত্তম কোনো ঘ্রাণ অনুভব করি নি। তাঁর ঘাম মুক্তার মতো চকচক করত। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল।
নবীজির দুই কাঁধের মাঝামাঝি পিঠের দিকে ছিল একটি গোশতের টুকরা। এটাই নবুয়তের নিদর্শন—মোহরে নবুয়ত। সাহাবিদের বিভিন্ন বর্ণনা মেলালে বোঝা যায়, মোহরে নবুয়ত ছিল অনেকটা কবুতরের ডিমের মতো; কিছুটা লাল, তবে তা তার শরীরের বর্ণের সাথেই সুসাম্য বজায় রেখেছে। তাতে পশমের মতো একগুচ্ছ কেশের আবরণ ছিল। আর আচিলের মতো কতগুলো তিলক তাকে ঘিরে রেখেছিল। কিন্তু এই সম্মানিত নিদর্শন এতটা অবাধ ছিল যে, চাইলে যে-কেউ চুম্বন করতে পারতেন।
( সূত্রের জন্য দেখুন, ব্যক্তি ও পরিবার /ব্যক্তিত্ব ও দৈহিক বর্ণনা / নবীজির স. কান্তিময় অবয়ব ও সুন্দর গঠন)