সালাম : নবীজির নির্দেশনায়

দৈনন্দিন জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ সালাম। সালাম ইসলামের পরিচয় ও আদর্শ বহন করে। ইসলামের রুচি ও সংস্কৃতি বহন করে। ইসলামের নৈতিকতা ও পয়গাম বহন করে। সালাম চর্চা করার নানা মাত্রিক প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আছে। নবীজির সালাম বিষয়ক কিছু নির্দেশনা ও শিক্ষাও আছে। সালামের ব্যাপক চর্চা বৃদ্ধিতে এই নির্দেশনা ও শিক্ষা অবশ্যই সাহায্য করবে।

১)

সালামের ব্যাপক চর্চা করতে হবে। কেননা বারা ইবনে আযেব রাদিঃ বলেন, নবীজি সাতটি বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করেছেন, এর মধ্যে সালামের প্রসার অন্যতম।[1. ( বুখারি ১২৩৫)]। বস্তুত   সালাম ইসলামের একটা মৌলিক শিক্ষা। ইসলামে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নবীজি এর জন্য সালাম বিনিময় করতে বলেছেন। সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা দৃঢ় হয়, বিদ্বেষ দূর হয় এবং পরিচয় গভীরতা লাভ করে। মুসলমানরা সালামের মাধ্যমে ঐক্য অর্জন করে, সামাজিকতা বৃদ্ধি করে ও পরস্পরে সহযোগী-সমবায়ী হয়, এ কারণে নবীজি সালামকে ঈমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সালামকে বলেছেন বরকতের মাধ্যম।

২)

ইসলামী শব্দে সালাম দিতে হবে, এটাই নবীজির সুন্নত। হাদিসের ভাষ্যে প্রমাণিত যে, রুহের জগতে আদম আঃ কে এভাবেই সালাম দিয়েছেন।[2. ( বুখারি ৬২২৭)]।  পরিপূর্ণ সালাম দিতে হবে অর্থাৎ আস সালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহু বলতে হবে। কেননা নবীজি পরিপূর্ণভাবে সালাম দিলে ত্রিশ ছাওয়াব পাওয়া যায় বলেছেন। [3.( আবু দাউদ ৫১৯৫)] । সালামে অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখা যাবেনা। কেননা নবীজি বলেছেন, যারা অপরের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইহুদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। ইহুদীদের সালাম তো আঙ্গুলের ইশারা আর নাসারাদের সালাম হাতের তালুর ইশারা।[4. ( তিরমিজি ২৬৯৫)] । বস্তুত সালামের ইসলামের নিদর্শন, এক্ষেত্রে অপরের রীতি ও সংস্কৃতি গ্রহণ করলে কেমন হবে? তখন তো সালাম কুফুরের সংস্কৃতি ও নৈতিকতার প্রচারক হয়ে যাবে।

৩)

প্রথমে সালাম দিতে চেষ্টা করা। কেননা নবীজি বলেছেন, দুজনের দেখা হলে প্রথমে সেই সালাম দিবে যে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভকারী।[5. ( তিরমিজি ২৬৯৪)] । অবশ্য দুজনেই প্রথমে সালাম দিলে দুজনই উত্তর দিবে।[6. ( আলমগীরি, ৫/ ২২৫)] । অমুসলিমদের সালাম দিতে দ্রুততা না করা। দিতে হলে শুধু মাত্র ওয়ালাইকুম বলা।[7. ( মুসলিম ২১৬৭। বুখারি ৬২৫৭)] । সালাম ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বহন করে। শান্তি ও ঐক্যের আহ্বান বহন করে। অমুসলিমরা তো এর যোগ্য নয়। তারা তো কুফুর, অবাধ্যতা ও অশান্তির বাহক। অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিকারী। তারা তো সালামের অযোগ্য।

৪)

কথা শুরুর আগেই সালাম দিতে হবে। [8.( তিরমিজি ২৬৯৯)] । সালামের উত্তর না দিলে তিন বার সালাম দিবে। [9.( বুখারি ৬২৪৪)] । ছোটরা বড়দেরকে, গমনকারীরা উপবিষ্টদেরকে এবং ছোট দল বড় দলকে আগে সালাম দিতে চেষ্টা করবে। [10.( বুখারি ৬২৩৪)] । একইভাবে শিশুদেরকেও সালাম দিতে হবে। কেননা নবীজি এটাই নবীজির সুন্নত ছিল। [11.( বুখারি ৬২৪৭)]। মাহরাম মহিলাদেরকে সালাম দিতে হবে। কেননা নবীজি মসজিদে বসে থাকা মহিলাদেরকে সালাম দেন।[12. ( ২৬৯৮)]। পাশে কেউ ঘুমিয়ে থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই সালাম দিতে হবে। [13.( মুসলিম ২০৫৫)] । মজলিসের শেষ সালাম দিতে হবে।[14. ( আবু দাউদ ৫২০৮)]। মজলিসে মুসলমান ও অমুসলমান উভয় রকম মানুষ থাকলে সেই মজলিসে সালাম দিতে অসুবিধা নেই।[15. ( বুখারি ৬২৫২)] এগুলো সালাম বিষয়ে নবীজির বিশেষ নির্দেশনা। এগুলোর ওপর আমল করতে হবে।

৫)

সামান্য সময় পরে দেখা হলেও সালাম দিতে হবে। কেননা নবীজি বলেন, দুজন মুসলমান একসাথে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে গাছ, পাথর বা কোন কাঁচা ঘরের আগ-পিছ হয়ে গেলো, তো, তারা একে অপরকে আবার সালাম দিবে।[16. ( শুয়াবুল ঈমান ৮৪৭১)]। ঘরে প্রবেশ ও বাহির হবার সময় সালাম দিতে হবে। [17.( আবু দাউদ ৫০৯৬)] । ঘরে কেউ না থাকলে বলতে হবে, আস সালামু আলাইনা ও আলা ইবাদিল্লাহিস সলেহীন। [18.( শামী ৪১৩)] । বস্তুত সালাম মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৬)

সালামের উত্তর দিবে হবে। কেননা নবীজি বলেছেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সালামের উত্তর দেওয়া। [19.( বুখারি ১২৪)] । সালামের উত্তরে সালামের চেয়ে অধিক শব্দ ব্যবহার করা বা অন্তত সমান শব্দে সালাম দেওয়া।[20. ( নিসা ৮৬)]। অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে কারো মাধ্যমে সালাম পাঠানো যায়। জিবরাইল আঃ আয়েশা রাদিঃ এর কাছে নবীজির মাধ্যমে সালাম পাঠিয়েছেন। অনুপস্থিত সালামের জবাবে বলতে হবে, আলাইকা ও আলাইহিস সালাম অর্থাৎ মূল সালামদাতা ও সালামের বহনকারী উভয়কেই সালামে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।[21. ( বুখারি ৬২৫৩ ) ( আবু দাউদ ৫২৩১) ।]

এভাবে সালাম ইসলামী সমাজ ও সামাজিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যত্নের সাথে সালাম চর্চা করা এবং সালাম চর্চার প্রসার ঘটানো আমাদের একটা মৌলিক কর্তব।