স্বপ্ন : নবীজির মূল্যায়ন ও শিক্ষা

মানুষ ঘুমালে অনেক সময় স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন  জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নবীজি বলেছেন, মানুষ তিন রকমের স্বপ্ন দেখে। সত্য স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, মিথ্যা স্বপ্ন, যা শয়তানের ওয়াসওসা এবং জৈবনিক স্বপ্ন, মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে যেসব বিষয়ে ভাবিত থাকে, সেসব বিষয়েও মানুষ স্বপ্ন দেখে। ( মুসলিম ২২৬৩)  স্বপ্ন, সে যে প্রকারই হোক,মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা ও বাণী বহন করে। কেননা এটা হয়তো আল্লাহর সুসংবাদ, শয়তানের ওয়াসওয়া বা জীবনের ভাবনা, এর সবই গুরুত্বপূর্ণ । স্বপ্নের বিষয়ে রয়েছে নবীজির বিশেষ কিছু নির্দেশনা ও শিক্ষা।

১) স্বপ্ন বিষয়ে মৌলিক কথা

বাস্তবে স্বপ্ন না দেখে মিছামিছি স্বপ্ন দেখেছি বলা যাবেনা, আলেম বা কল্যাণকামী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলা যাবেনা এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তাড়াহুড়াও করা যাবেনা। কেননা নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি বানিয়ে স্বপ্ন দেখেছি বলে, তাকে আল্লাহ তাআলা যবের দুই দানার মধ্যে গিঁট দিতে বলবেন। সে তো এটা কখনোই পারবেনা। [1.( বুখারি ৭০৪২ )] একইভাবে নবীজি বলেছেন, ধর্মীয় আলেম ও কল্যাণকামী ব্যক্তি ছাড়া কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবেনা।[2. ( তিরমিজি ২২৮ )]। নবীজি এটাও বলেছেন যে, স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার আগে আটকে থাকে, ব্যাখ্যা করলেই ব্যাখ্যা ঘটে যায়।[3.( আবু দাউদ ৫০২)] স্বপ্নের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যারা মিথ্যা বলে, তাদের জন্য রয়েছে শক্ত শাস্তি। স্বপ্ন ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী। আলেম বা কল্যাণকামী ব্যক্তির কাছেই ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। অশিক্ষিত বা অকল্যাণকামী কারো কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যাবেনা। তারা তো যথাযথ ব্যাখ্যা বলতে পারবেনা। ভুল ও ক্ষতিকর ব্যাখ্যা করে বসবে।

২) স্বপ্ন ব্যাখ্যার দোয়া

স্বপ্ন ব্যাখ্যার আগে এই দোয়া পড়ে নিবে, ‘ খাইরুন তালকাহু ওয়া শাররুন তাওয়াক্কাহু,  ওয়া খাইরুন লানা ও শাররুন লিআ’দাইনা, অল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।[4. ( আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল ৬৯৪)]  স্বপ্নের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাখ্যার আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করে নেওয়া উচিত। আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে নেওয়া উচিত। বস্তুত তিনিই একমাত্র আশ্রয় ও সাহায্যদাতা।

৩)ভালো স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রশংসা, সন্তুষ্টি ও সুন্দর ব্যাখ্যাগ্রহণ

ভালো স্বপ্ন দেখলে প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করে নিতে হবে।[5. ( বুখারি ৬৯৮৫)]। এবং এতে খুশী হতে হবে। কেননা নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালো স্বপ্ন দেখবে, তার খুশী হওয়া উচিত। পছন্দের মানুষের কাছেই এই স্বপ্নের কথা বলবে।[6. ( মুসলিম ২২৬১)] । এবং স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা গ্রহণ করার চেষ্টা করবে। কেননা নবীজি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন দেখলে, এর ভালো ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে এবং পছন্দের মানুষের কাছে এটা বলতে হবে।[7. ( জামে সাগীর ৬১৬)] । আসলে আল্লাহই তো তাকে এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং আল্লাহর দানে খুশী হতে হবে। আল্লাহর দানে খুশী হওয়া বন্দেগীর অংশ, উবুদিয়াতের অংশ। একইভাবে আল্লাহর দান স্বপ্নের নানারকম ব্যাখ্যার মধ্যে  উত্তম ব্যাখ্যাই গ্রহণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ ইতিবাচকতা পছন্দ করেন, সুধারণাই পছন্দ করেন।হতাশা, নেতিবাচকতা ও  কুধারণা পছন্দ করেন না।

৪)খারাপ স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা ও স্বপ্ন থেকে মুক্তি কামনা

প্রথমে বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে, তিনবার আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনীর রজীম পড়বে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে। কেননা নবীজি বলেছেন, তোমরা কোন অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে, তিনবার আউজু বিল্লাহ পড়বে এবং যে পার্শে শুয়ে সে স্বপ্ন দেখেছে, সেই পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে।[8. ( মুসলিম ২২৬২)]  খারাপ কিছু হলেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও সাহায্য চাইতে হয়। এখানেও স্বপ্নের খারাপ ব্যাখ্যা ও ইশারা থেকে মুক্তি কামনা করবে। মুক্তি ও আশ্রয়ের প্রত্যাশার অংশ হিসেবে থুতু ফেলা ও পার্শ্ব পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে।  যেনবা এটা শয়তানের স্বপ্ন। থুতু ও পার্শ্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা হচ্ছে, যেমন মানুষ ময়লা-আবর্জনা দেখলে করে থাকে।

৫) নামাজ পড়া ও কাউকে না বলা।

অন্য যে কোন বিপদের মত নবীজি খারাপ স্বপ্ন দেখলেও নামাজ পড়তে বলেছেন। এবং কারো কাছে এই স্বপ্নের কথা বলতে নিষেধ করেছেন।[9. ( মুসলিম ২২৬৩)] কেননা খারাপ স্বপ্নও একটা বিপদ। বিপদে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। আশ্রয় চাওয়ার সবচেয়ে ভালো তরিকা হচ্ছে নামাজ। কেননা নামাজ তো আল্লাহর সাথে মুমিনের মেরাজ। মেরাজেই বান্দা বলতে পারে কী তার দাবী ও তার কী প্রয়োজন। এর জন্য নামাজের চেয়ে আর ভালো কোন আয়োজন তো হতে পারেনা। এবং খারাপ স্বপ্নের কথা কাউকে বলা যাবেনা। সে তো মহান আল্লাহর কাছেই বলেছে, আর কার কাছে বলার আর প্রয়োজন আছে?