মক্কা বিজয়েরপর সাধারণভাবে আরবের লোকেরা বিপুল সংখ্যায়ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে।এদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন, যারা ইসলামেরসত্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া সত্ত্বেও কুরাইশদের প্রতিপত্তির ভয়ে ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব করছিলেন এবং মক্কা বিজয়ের অপেক্ষা করছিলেন।এখন তাদের সকলেই দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করলেন।অবশিষ্ট আরবদেরও এমনশক্তি বা সাহস ছিলো না যে, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।কিন্তু হাওয়াযিন ও সাকিব গোত্র দুটি জাত্যাভিমান ও আত্মসম্মানবোধের খাতিরে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হলো।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে অবগত হয়ে ১২ হাজার সৈন্যের এক বিরাট বাহিনীকে তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত করলেন।এঁদের মধ্যে ১০ হাজার ছিলেন আনসার ও মুহাজিরগণ,যাঁরা মক্কা বিজয়ের সময়মদিনা হতে নবীজির সাথে এসেছিলেন;আর ২ হাজার ছিলেন নও মুসলিম,যাঁরা মক্কা বিজয়ের সময়ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।এ সংখ্যাটি তখনপর্যন্ত মুসলিম-বাহিনীর সবচেয়ে বড় সংখ্যা ছিলো।
আল্লাহর দল রওনা হলেন।যখন তাঁরা হুনাইন প্রান্তরে উপনীত হলেন, তখনপাহাড়ের ঘাঁটিতে আত্মগোপনকারী শত্রুরা অতর্কিতভাবে মুসলমানদের উপর হামলা করে বসলো।যেহেতু তখনও সৈন্যদের ব্যুহ-বিন্যাসই সম্পন্ন হয়নি, তাই মুসলিম-বাহিনীর সম্মুখভাগ পিছু হটতে লাগলো।
এই পিছু হটার বাহ্যিক কারণ ব্যুহ-বিন্যাসের অপূর্ণতা আর নওমুসলিম মাক্কিদের হঠাৎ সন্ত্রস্ততা বলা হলেও প্রকৃত কারণের ইঙ্গিতপবিত্র কুরআনে রয়েছে;—অর্থাৎ মুসলিমগণ তখন নিজেদের চিরচারিত অভ্যাসেরবিপরীতে নিজেদের সংখ্যাধিক্য এবংসাজ-সরঞ্জাম প্রত্যক্ষ করে আত্মপ্রসাদলাভ করছিলেন এবং কোনো কোনো সাহাবি, এমনকি হযরত সিদ্দিকে আকবর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো ব্যক্তিরজবান থেকেও এ ধরনের কথা উচ্চারিত হয়েছিলো যে, ‘আজ আমরা পরাজিত হতেপারি না।’এজন্য সর্বময়ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহতাদেরকে সতর্ক করার নিমিত্ত এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন,যেন মুসলমান বুঝতে পারে, আমাদের জয়-পরাজয়আমাদের হাতে নয়এবং তা তির-তরবারির খেলামাত্রও নয়। এ অন্য কোনো রহস্য।বদর যুদ্ধেনিরস্ত্র হওয়াসত্ত্বেও এত বড় বিজয়, আর হুনাইন যুদ্ধে এতবিপুল সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ সত্ত্বেও প্রাথমিক পরাজয়ের এ-ই সেই নিগূঢ় রহস্য।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দুটি বর্ম পরিধান করে দুলদুল নামক একটি সাদা খচ্চরের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। লোকদেরকে পিছু হটতে দেখে নবীজির নির্দেশে হযরত আব্বাসরাযিয়াল্লাহুআনহু মুসলমানদেরকে এক বীরত্বব্যঞ্জক আওয়াজ দ্বারা দৃঢ় থাকার আহ্বান জানালেন।এতে নড়বড়ে ও টালমাটাল বাহিনী পুনরায় সুদৃঢ় হয়েগেলো এবং উভয় দলের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হলো।
এদিকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমুষ্টি মাটি উঠিয়েশত্রুদের দিকেনিক্ষেপ করলেন।যমহান আল্লাহর কুদরত প্রতিপক্ষের প্রতিটি সৈন্যের চোখে তা এমনভাবে পৌঁছে দিল যে, একটি চোখও এ থেকে রেহাই পেলো না।অবশেষে শত্রু-বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত ও পরাজিত হয়ে পালাতে বাধ্য হলো।মুসলিম-বাহিনীর চারজন এবং কাফেরদের সত্তরজনেরঅধিক লোক নিহত হলো।মুসলমানরা প্রতিশোধ-স্পৃহায়নারী ও শিশুদের প্রতি হাত উঠাতে চাইলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বিরত রাখলেন।
তথ্যসূত্র :আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি;সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতি শফি।